সৌদি আরবে পিতা-পুত্র সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে অনেক প্রবাসিই আজ নিঃস্ব

চরম অসহায়ের প্রবাস জীবন। আর সেখানে কাজের বৈধতা আর কাজ দুইটাই না থাকলে তাহলে প্রবাসীদের জীবনে নেমে আসে চরম হতাশা ও দুঃখ।জমি জামা ও সুধের টাকা নিয়ে অনেকেই প্রবাসে আসে এমন পরিস্তিতি পড়ে অনেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে ।

এমন প্রলোভন শিকার হয়েছে ফেনী জেলার কিছু অসহায় মানুষ । পিতা-পুত্র সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন বলে জানা গেছে। পিতা আবু তৈয়ব ও পুত্র কাওসার হামিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ওমর ফারুক ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত তা আমলে নিয়ে পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। পিটিশন মামলা নং-১৭৭/১৮ ইং।

মামলার বিবরণ ও ভুক্তভোগীর বক্তব্যে জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়ার ওমর ফারুককে এক বছর আগে ফ্রি ভিসা বলে সৌদি আরব পাঠায় আসামীগণ। শর্ত ছিলো সৌদি যাওয়ার পর ওমর ফারুককে তার কফিল/মালিক থেকে রিলিজ নিয়ে তার সুবিধামত অন্য মালিকের নিকট অবশ্যই ট্রান্সপার/তানাজুল করে দিবে।

কিন্তু এক বছর সময় অতিবাহিত হলেও শর্তানুযায়ী পিতা তৈয়ব ও পুত্র কাওসার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়। এদিকে ভুক্তভোগী ওমর ফারুক তার সুবিধামত কফিল/মালিক ট্রান্সপার না হওয়ায় বেকার থেকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হন।

এর মাঝে ওমর ফারুকের নিকট ভিসা বিক্রয়কারী সৌদি প্রবাসী আবু তৈয়ব বাংলাদেশে এসেছে শুনে ফারুকের মা ও ভাই যোগাযোগ করে এর সমাধানের জন্য চাপ দিলে গত জুলাই মাসে তিনশত টাকার ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে তৈয়ব ও কাওসারের সাথে ফারুকের বিষয় নিয়ে একটি চুক্তিনামা সম্পাদিত হয়।

তাতে উল্লেখ থাকে যে, আগামী ৪ মাসের মধ্যে সৌদি আরব অবস্থানরত ওমর ফারুকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে না পারলে পিতা-পুত্র সমুদয় আর্থিক ক্ষতিপুরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। কিন্তু স্ট্যাম্পকৃত অঙ্গীকারনামার সময়সীমা শেষ হতে চললেও তারা প্রতিশ্রুতি পুরণে আবারো চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়।

অবশেষে গত ৩০ অক্টোবর ওমর ফারুককে সৌদি মালিক ও লোকজন মারধর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি তাকে দেশে পাঠানোর সময় এয়ারপোর্টে প্রিঙ্গার প্রিন্ট রেখে দেয়ার ব্যাবস্থা করায় যাতে করে ফারুক আগামী পাঁচ বছর অন্য কোনো ভিসায়ও সৌদি আরব প্রবেশ করতে পারবে না।

এসব ঘটনায় ওমর ফারুক এতটাই শারিরীক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন যে তিনি বাংলাদেশে এসে তাঁকে চিকিৎসা গ্রহন করতে হয়। অতঃপর ভুক্তভোগী ওমর ফারুক গত ২০ নভেম্বর ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিতা-পুত্রের প্রতারণার বিচার চেয়ে ও সম্পাদিত চুক্তিনামার আলোকে আর্থিক ক্ষতিপুরন দাবী করে মামলা দায়ের করলে আদালত তা আমলে নিয়ে ওয়ারেন্ট জারী করেন এবং পিতা-পুত্রকে আটকের জন্যে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, আদম বেপারী পিতা-পুত্র এ সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে ফেনীর অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন।

প্রতারণার শিকার হয়ে আইনী জটিলতায় পড়ে অনেকেই আটকে আছেন সৌদিতে। এদের কারো কারো আকামা না হওয়ায় তারা এখন অবৈধ হয়ে গেছেন। তৈয়ব ও কাওসার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সৌদি গিয়ে ফেঁসে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ফেনীর বালিগাঁওয়ের মোঃ নুর আলম, শর্শদীর শরিফুল ইসলাম, রাজাপুরের ইউসুফ ও সোনাগাজীর ভোরবাজারের রনীসহ আরো অনেকেই। প্রতারণার শিকার হওয়া একজন ভুকৃতভোগী সৌদি থেকে একজন জানিয়েছেন আবু তৈয়ব সৌদি আরবের বিভিন্ন লেবার সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে কম বেতনে কর্মী দিবে বলে ভিসা সংগ্রহ করে এসব ভিসা বাংলাদেশে এনে অনেক সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে ফ্রি ভিসা বলে মানুষের নিকট প্রতিটি ভিসা ৬ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে।

এসব ভিসাগুলো বিক্রির সময় পিতা-পুত্র মানুষের যে কোনো শর্ত মেনে নিয়ে পরে প্রতারণা করে। কিন্তু এসব ভিসা ক্রয় করে লোকজন সৌদি এসে দেখতে পায় সব কিছুই মরিচিকা। কারণ এসব ভিসাদাতা সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই মানুষ নামক কর্মী বা কর্মীদের শ্রম বেশি দামে বিক্রি করে শ্রমিককে নামমাত্র মজুরী দেয়। কাউকে মালিক বদল বা অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রশ্নই আসেনা।

তাছাড়া তৈয়ব-কাওসার তথা পিতা-পুত্র সিন্ডিকেটের প্রতারণার ফাঁদ ‘ফ্রি ভিসা’ নামক কোনো ভিসার অস্তিত্ব পাওয়াতো দূরের কথা চোখে দেখারও সুযোগ নেই। আরো একটি সূত্র জানিয়েছে, সিন্ডেকেট প্রধান আবু তৈয়ব গত কয়েকমাস আগে এক সৌদি নাগরিকের প্রচুর পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে দেশে চলে আসে।এছাড়াও মানুষের সাথে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আরো ৫০টি ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

বর্তমানে পিতা ও পুত্র মিলে সহজ সরল নিরীহ লোকজনের নিকট উচ্চমুল্যে ভিসাগুলি বিক্রি করছে এবং ফেনী ও ঢাকায় দুটি রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে ওইসব ভিসাগুলি প্রসেসিং করে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরব পাঠানোর ফাঁদ পেতে ওই মানুষগুলির সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে।

প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখনি পিতা-পুত্র তৈয়ব ও কাওসার সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে না ধরলে অচিরেই অনেক মানুষ এদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে।